কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারীতা

 কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারীতা

কিসমিস হলো শুকনো আঙুর যা প্রাকৃতিক মিষ্টতা এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি সাধারণত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি রঙের হয়ে থাকে এবং এর ভিতরে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুন রয়েছে। কিসমিস খেলে শরীরের জন্য উপকারী হলেও, ভিজিয়ে খাওয়া কিসমিসের উপকারিতা আরও বেশি। ভিজানো কিসমিসে থাকা ভিটামিন খনিজ,ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য দ্রুত শোষিত হয়।এবং বিভিন্ন কাজ করে। 


 

পোস্টসূচীপত্র:

হজমের উন্নতি :

কিসমিসে ফাইবারের একটি ভালো উৎস আছে যা হজম প্রতিক্রিয়া জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় শুকনো কিসমিস সরাসরি খাওয়ার সময় শরীর তা সম্পূর্ণরুপে হজম করতে পারেনা। তবে ভিজানো কিসমিস শরীরে সহজে হজম করতে পারে কারণ ভিজিয়ে রাখার ফলে কিসমিসে থাকা ফাইবার নরম হয়ে যায়। এতে করে পেটের গ্যাস,কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য হজম সমস্যা দুর হয় নিয়মিত ভিজানো কিসমিস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে হজম জনিত সমস্যা গুলো কমে যায়। 

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ :

রক্তস্বল্পতা ( অ্যানিমিয়া)  হলো শরীরে আয়রনের অভাব জনিতো সমস্যা যা শারিরীক দুর্বলতা অবসন্নতা এবং মাথা ঘোরা ঘটাতে পারে । কিসমিসে প্রচুর পরিমানে আয়রন, কপার এবং ভিটামিন বি থাকে যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আয়রন শরীরে অক্সিজেন বহনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ভিজানো কিসমিস নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতার হ্রাস পায় এবং রক্তের  স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। 

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে :

ভিজানো কিসমিস খেলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এতে থাকা পটাসিয়াম এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে যা হৃদরোগ প্রতিরোধ সহায়ক। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হৃদরোগের একটি মুল কারণ। পটাসিয়াম রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে ফলে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমে। এছাড়াও কিসমিসে ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় যা হার্টের জন্য উপকারি। 

হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি :

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কিসমিস একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান কিসমিসে ক্যালসিয়াম এবং বোরন থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য যেখানে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি থাকে কিসমিস খুবই উপকারী। বোরন শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং হাড়ের গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত ভিজানো কিসমিস খেলে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।


 

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

ভিজানো কিসমিস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরে ফ্রি রাডিক্যালগুলির ক্ষতিকর প্রভাব কমায় ফ্রি রাডিক্যালস শরীরের কোষের ক্ষতি করে থাকে এবং বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ শরীরের ফ্রি রাডিক্যালসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে শরীর সহজেই সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায় এবং দীর্ঘ মেয়াদি রোগ যেমন ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। 

ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি :

ভিজানো কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বকের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিসমিসে উপস্থিতি ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপাদান ত্বকের কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। যা ত্বককে টানটান ও স্বাস্থ্যবান রাখে। নিয়মিত ভিজানো কিসমিস খেলে ত্বকে ব্রণ,দাগ,এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা কমে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল হয়।

চুলের যত্ন :

কিসমিসে থাকা ভিটামিন বি আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আয়রনের অভাব জনিত কারনে অনেক সময় চুল পড়া শুরু হয়। কিসমিস খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়। ভিজানো কিসমিস নিয়মিত খাওয়া চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়ক  কারণ এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হয়।

শারীরিক ক্লান্তি দুর করে :

ভিজানো কিসমিস খেলে তাৎক্ষনিকভাবে শক্তি পাওয়া যায়। কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনির ভালো উৎস রয়েছে যা দ্রুত শরীরে শক্তি জোগায়। যারা শারীরিক ভাবে অনেক কাজ করেন বা ব্যায়াম করেন তাদের জন্য ভিজানো কিসমিস অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরে শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি দুর করে। 


 

ডিটক্সিফিকেশন :

ভিজানো কিসমিস শরীরের জন্য প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসাবে কাজ করে এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে টক্সিন দুর করতে সাহায্য করে কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ লিভার কে টক্সিন মুক্ত রাখতে সহায়তা করে এবং রক্ত পরিস্কার করে নিয়মিত ভিজানো কিসমিস খেলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ সহজেই বেরিয়ে যায় এবং শরীর কে সুস্থ রাখে। 

উপসংহার :

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া কেবল একটি প্রাচীন ঘরোয়া পদ্ধতি নয় এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত উপায়  যা শরীরের জন্য বহুমুখী উপকারিতা প্রদান করে। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url