গাজর খাওয়ার ৮ টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি। গাজর একটি পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের দেহে বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে থাকে। আর্টিকেলটিতে আরো আলোচনা করা হয়েছে গাজর দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করা যায়। গাজরের রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
আপনারা নিশ্চয়ই গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বিভিন্ন প্রকার সবজির মধ্যে গাজর একটি অনেক উপকারি। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত জরুরী। নিয়মিত গাজর খেলে আপনার ত্বক সুন্দর এবং লাবণ্যময় হবে আর্টিকেলটিতে গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা পাশাপাশি গাজর দিয়ে রূপচর্চা করার বিভিন্ন ফর্মুলা সম্পর্কে লেখা হয়েছে।
গাজর খাওয়ার উপকারিতা
গাজরের উপকারিতা অনেক রয়েছে গাজর একটি শীতকালীন সুস্বাদু সবজি। তবে এটি শীত ছাড়াও বারো মাস চাষাবাদ হচ্ছে। শরীরকে সুস্থ রাখতে গাজর খাওয়ার অনেক ভূমিকা রয়েছে। গাজরের রং বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে বাংলাদেশে যে গাজর বাজারজাত করা হয় সেটির রং কমলা গাজরের রং লাল কমলা হলুদ সাদা হয়ে থাকে। অনেকে গাজর খেতে পছন্দ করে গাজর নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে চলুন আমরা জেনে নি।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াই: চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে বিটা ক্যারোটিন প্রয়োজন আর এই বিটা ক্যারোটিন রয়েছে গাজরে আপনি যদি পূর্বে গাজর না খেয়ে থাকেন তাহলে এখন থেকে গাজর খাওয়া শুরু করে দিন। বিটা ক্যারোটিন যা আপনার লিভারে গিয়ে ভিটামিন এ তে বদলে যায় এবং চোখের রেটিনায় গিয়ে পৌঁছে চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখে রাতের বেলায় অন্ধকারে ভালো দেখার জন্য দরকারি এমন এক ধরনের বেগুনি পিগ্মেট এর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টি শক্তিশালী ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ এর চমৎকার উৎস: গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে যা শরীরের ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয় ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে। বিশেষত রাতে অন্ধত্ব প্রতিরোধে কার্যকর।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী: গাজরে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ক্যারোটিনয়েড এবং লুটিন শরীরকে ফ্রি রেডিকেল ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে: গাজরে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যে ভালো রাখে এটি খারাপ কোলেস্টরেল ( এলডিএল ) কমিয়ে রক্তনালী সুস্থ রাখে।
আরো পড়ুনঃ
সজিনা পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারীতা
ত্বকের জন্য উপকারী: গাজরে থাকা ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে, এটি ব্রণ, মেসতা, ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমায়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: গাজরে ক্যালরির পরিমাণ কম এবং ফাইবারের পরিমাণ
বেশি। ফলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরাট রাখে এবং ক্ষুধা কমায় যা ওজন নিয়ন্ত্রণে
সহায়ক।
পাচনতন্ত্রের উন্নতি: গাজরে উপস্থিতি ভাইবার হজম শক্তি উন্নতি করে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে: গাজরে থাকা ভিটামিন সি শরীরে সাদা রক্ত কণার
কার্যক্রম বৃদ্ধি করে যার রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি: গাজরে থাকা ভিটামিন কে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হারের ঘনত্ব বাড়াই এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ সাহায্য করে ।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ: গাজরে আইরন এবং ভিটামিন সি রয়েছে যার রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ সহায়ক ।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: গাজরে থাকার ফ্যালকারিনল নামে একটি প্রাকৃতিক যৌগ
ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি ধীর করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ কার্যকর।
কাঁচা গাজর খাওয়ার নিয়ম
গাজর একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি যা সারা বছর সহজলভ্য। এর পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সঠিক নিয়মে খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাজর বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় কাঁচা রান্না করা রস করে বা সালাদের সাথে মিশিয়ে। তবে সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ মেনে খেলে গাজরের উপকারিতা সর্বাধিক উপভোগ করা যায়।
কাঁচা গাজর খাওয়া সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি এটি পুষ্টিগণ সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষণ করে। গাজর খাওয়ার আগে পরিষ্কার করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং প্রয়োজনে খোসা ছাড়িয়ে নিন। গাজর কেটে ছোট ছোট টুকরা করে সালাদ তৈরি করে খেতে পারে।
সালাদে টমেটো শসা লেটুস ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য কাঁচা গাজর খাওয়া মাঝে মাঝে গ্যাস বা পেট ফাঁপা সৃষ্টি করতে পারে সে ক্ষেত্রে হালকা সিদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। দিনে দুই-তিন টি কাঁচা গাজরের বেশি না খাওয়াই ভালো।
গাজরের রস খাওয়ার নিয়ম
গাজরের রস শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এটি সহজ প্রাচ্য এবং দ্রুত এনার্জি যোগায়। দুই তিনটি মাঝারি আকারের তাজা গাজর নিয়ে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়ান। তারপর ব্লেন্ডার বা জুসার মেশিনে হালকা পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। প্রয়োজনে লেবুর রস বা আধা যোগ করতে পারে না। মিশ্র হয়ে গেলে পরিস্কার কাপড় বা ছাকনা দিয়ে ছেকে নিন।
সকালে খালি পেটে গাজরের রস খাওয়া সবচেয়ে উপকারী এটি শরীরের ডিটক্স করে এবং সারাদিনের জন্য এনার্জি প্রদান করে। গাজরের রস খাওয়ার পর ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। দিনে এক গ্লাসের বেশি গাজরের রস না খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত গাজরের রস খেলে ত্বকে হলুদাভাব আসতে পারে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য গাজরের রস পরিমাণ মতো খাওয়া জরুরি।
গাজর খাওয়ার অপকারিতা
অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন এ এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা হাইপার ভিটামিনোসিস এর নামে পরিচিতি একটি অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। এটি মাথাব্যথা বমি ক্লান্তি এবং যকৃতের ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে গাজর খেলে যে সকল ক্ষতিকর সম্মুখীন হতে পারেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
অনেক বেশি গাজর খাওয়ার ফলে ক্যারোটিনিমিয়া হতে পারে যা তোকে হলুদাভাব রং আনতে পারে এটি ক্ষতিকর না হলেও চেহারার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। গাজরে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত গাজর খেলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গাজর এলার্জির সৃষ্টি করতে পারে, এর লক্ষণগুলোর মধ্যে চুলকানি ত্বকে লাল দাগ এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত ফাইবার খাবার ফলে পেট ফাঁপা গ্যাস এবং ডায়রিয়া হতে পারে যারা অন্ত্রের সংবেদনশীল সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
গাজরে থাকা কিছু যোগ রক্তপাত রোধে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে বিশেষত যাদের ব্লাড থিনার ওষুধ চলছে তাদের সতর্ক থাকা উচিত। গাজর অতিরিক্ত খাওয়া হলে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের জন্য স্থান কমে যেতে পারে যা পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
গাজরে উপস্থিত কিছু প্রাকৃতিক ফাইটো অ্যাস্ট্রোজেন হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে বিশেষ করে যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া হয়।
গাজর রান্না করে খাওয়ার নিয়ম
রান্না করা গাজর সহজে হজম হয় এবং অনেক পুষ্টিগুণ্য থাকে গাজর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন সিদ্ধ করে বা হালকা হাঁপিয়ে রান্না করুন সুপ তরকারি বা মুনা রেসিপিতে গাজর ব্যবহার করা যেতে পারে রান্না করার সময় গাজরের শরীরে পানি শোষিত হয় সেদ্ধ করা গাজর ফাইবার নরম হয় যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
গাজর দিয়ে রূপচর্চা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালাম এখন জানাবো গাজর দিয়ে রূপচর্চা কিভাবে করতে হয় আমরা সকলে রূপচর্চা করতে পছন্দ করি আমরা চাই আমাদের ত্বক সব সময় ভালো থাকুক। এক্ষেত্রে গাজরের ভূমিকা অনেক বেশি। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক গাজর দিয়ে রূপচর্চা করার নিয়ম ।
গাজর ও মধু প্রথমে আধা কাপ গাজরের পেস্ট তৈরি করুন এরপর তাতে এক চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশ্রণ করুণ। মিশ্রণটি আপনার মুখ ও হাত পায়ে লাগিয়ে কমপক্ষে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ
সৌদি আরব সম্পর্কে ৭ টি রচনা তুলে ধরা হলো
বেসন ও গাজর গাজরের পেস্ট এর সাথে ২ চা চামচ বেসন ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। মিশ্রণটি মুখে এবং হাত-পায়ে লাগিয়ে ৫/৭ মিনিট অপেক্ষা করে ধরে ফেলুন।
কমলার খোসা ও গাজর আমাদের হাতের কাছে কিছু উপকরণ দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করার মধ্যে এটি একটি। প্রথমে কমলার খোসা ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিতে হবে এরপর গাজরের পেস্ট ও কয়েক ফোটা লেবুর রস দিয়ে মিশ্রণ করতে হবে। মিশ্রণটি ভালোভাবে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
উপরিক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে আপনি আপনার ত্বকে সুন্দর এবং লাবণ্যময় করে তুলতে পারবেন তবে লক্ষ্য রাখতে হবে অতি উপরিক্ত পদ্ধতি গুলোতে আপনার যদি অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
শেষ কথা
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা শুরু করে আমি আপনাকে বিস্তারিতভাবে গাজর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আপনি যদি গাজর খেতে পছন্দ করে থাকেন এবং নিয়মিত গাজর খেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে । আরেকটি কথা না বললেই নয় অতিরিক্ত যে কোন খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। তাই অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার মতামত গ্রহণ করবেন।
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার
আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সাথে আমার ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত
ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক দেখা হবে পরবর্তী
কোনো আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। ( আল্লাহ হাফেজ )
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url