প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন কলা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফল।
এটি সহজলভ্য সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে কলা
খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা
আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নিই প্রতিদিন সকালে
একটি কলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা।
পেজসূচিপত্র: প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন .
প্রতিদিন সকালে কলা খাওয়ার উপকারীতা
শক্তি বাড়াই ও কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কলাতে প্রাকৃতিক চিনি ফাইবার ও
কার্বোহাইড্রেট এর চমৎকার উৎস। সকালে একটি কলা খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়
যা দিন শুরু করার জন্য খুবই দরকারী। বিশেষ করে যারা সকালে ব্যায়াম করেন বা
কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় কাজ করেন তাদের জন্য কলা একটি আদর্শ খাবার।
হজমশক্তি উন্নত করে কলায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বিশেষ করে একটি ও
রেজিস্ট্যার্ন্ট স্টার্চ যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। এটি অন্ত্রের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে কলা
খেলে পরিপাকতন্ত্র ভালোভাবে কাজ করে এবং বদহজমের সমস্যা কমে।
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তনালী শিথিল করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর করতে কার্যকর
ভূমিকা রাখে। নিয়মিত কলা খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং হার্ট অ্যাটক ও
স্টোকের সম্ভাবনা হ্রাস কর।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে কলায় ট্রিপটোফ্যান ও ভিটামিন বি৬ থাকে যা
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। এটি সেরটোনিন উপাদান
বাড়িয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। যারা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হবেন তাদের জন্য
প্রতিদিন সকালে একটি কলা খাওয়া উপকারী হতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে অনেকেই মনে করেন কলা খেলে ওজন বাড়ে কিন্তু আসলে এটি
বিপরীত ভাবে কাজ করে। কলায় থাকা ফইবার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখে ফলে
ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। এটি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায় এবং ওজন
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কলায় ভিটামিন সি ভিটামিন বি৬ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এটি শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধ করতে
সহায়ক।
আরো পড়ুন:
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী কলায়
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন থাকায় এটি ত্বকের
উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নিয়মিত কলা খেলে ত্বক মসৃণ ও
উজ্জ্বল হয় পাশাপাশি চুল পড়ার সমস্যা কমে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে কলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যার রক্তস্বল্পতা
অ্যানিমিয়া দূর করতে সহায়ক এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং শরীরকে
দুর্বলতা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ কলা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে যারা
অনিন্দ্রা সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কলা অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ট্রিপটোফ্যান
ও ম্যাগনেসিয়াম পেশির চাপ কমিয়ে ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে একটি কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শুধু
শরীরকে শক্তি জগাই না বরং সামগ্রিকভাবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে
সহায়ক। তাই সুস্থ থাকতে ও কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে থেকে প্রতিদিন সকালে একটি কলা
খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কলা খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন কলা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফল
এবং এটি স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য পরিচিত। তবে কলা খাওয়ারও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম
রয়েছে যা জানলে এর পুষ্টিগুণ সর্বোচ্চ উপভোগ করা সম্ভব।
কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময়
কলা খাওয়ার জন্য সঠিক সময় জানা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সকালে খালি পেটে কলা
খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না কারণ এতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তে হঠাৎ বৃদ্ধি
পেতে পারে এবং শরীরে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। তবে সকালের
নাস্তায় বা দুপুরে খাবারের আগে কলা খাওয়া উপকারী।
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে কলা
খাওয়া কিছু ক্ষেত্রে হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে তবে যদি হালকা খাবার হিসেবে
গ্রহণ করা হয় তবে এটি ঘুমের মান উন্নত করতে পারে।
কলা খাওয়ার সঠিক উপায়
- পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া দিনে ১-২ টি কলা খাওয়া স্বাস্থ্যকর তবে অতিরিক্ত কলা খেলে রক্তে শর্করা মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- সঠিক সংমিশ্রণ কলা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খাওয়া জনপ্রিয় হলেও অনেক মনে করেন সমস্যা তৈরি করতে পারে। কলার সঙ্গে বাদাম ওটস বা চিয়া সিড মিশিয়ে খেলে এটি আরো পুষ্টিকর হয়।
- খালি পেটে না খাওয়া সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া অম্লতা বা পেট ফাঁফার কারণ হতে পারে। তাই এটি ব্রেকফাস্ট এর একটি অংশ হিসেবে খাওয়া ভালো।
কারা কলা কম খাবেন
- ডায়াবেটিস রোগীরা উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকায় অতিরিক্ত কলা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কিডনি রোগীরা পরিমাণ আক্রান্ত ব্যক্তিদের এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- অ্যাসিডিটি সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা অতিরিক্ত কলা খেল গ্যাস্ট্রিক বা পেট ফাঁফার সমস্যা হতে পারে।
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন সঠিক নিয়ম মেনে কলা খেলে এটি
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে
পারে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে সঠিক পরিমাণ ও সময় মেনে কলা খাওয়াই বুদ্ধিমানের
কাজ।
কিভাবে কলা খাবেন
কলা একটি পুষ্টিকর ফল যা সহজে খাওয়া যায় এবং অনেক উপকারিতা প্রদান করে। কলা
খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে এবং এটি কাঁচা রান্না করা বা বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে
মিশিয়ে খাওয়া যায়। নিচে কলা খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
সরাসরি কাচা খাওয়া সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কলার খোসা ছাড়িয়ে সরাসরি খাওয়া। এটি
দ্রুত শক্তি দেয় এবং সহজে হজম হয় সকালে নাস্তার সময় বা ক্ষুধা লাগলে কলা খেলে
তাৎক্ষণিক এনার্জি পাওয়া যায়। পদ্ধতি কলার উপরের ও নিচের অংশ কেটে নিন। খোসা
ছাড়িয়ে নরম হলুদ অংশটি খান। ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে দ্রুত হজম হবে।
কলার স্মুদি তৈরি কলার স্মুদী অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। এটি নাস্তা বা
ওয়ার্ক আউটের পর খাওয়ার জন্য আদর্শ। উপকরণ, একটি পাকা কলা। এক কাপ দুধ/বাদাম
দুধ। এক চামচ মধু। দুই তিনটি বরফের টুকরা। ইচ্ছেমতো কিছু বাদাম বা ওটস। পদ্ধতি,
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসঙ্গে দিন। মসৃণ হয়ে গেলে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন
করুন।
কলা দিয়ে প্যানকেক এর সাথে কলা মিশিয়ে খেলে এটি আরো সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর
হয়। উপকরণ, একটি পাকা কলা। এক কাপ ময়দা। একটি ডিম। এক দুই কাপ দুধ। এক চামচ
বেকিং পাউডার। এক চামচ চিনি। সামান্য লবণ। পদ্ধতি, কলা চটকে নিন এবং অন্যান্য
উপকরণের সাথে মিশিয়ে ব্যাটার তৈরি করুন। তাওয়াই তেল/মাখন গরম করে ব্যাটার ঢেলে
দিন। দুুই পাশ বাদামী হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
আরো পড়ুন:
কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
কলার সালাদ যারা স্বাস্থ্য সচেতন তাদের জন্য কলার সালাদ একটি চমৎকার বিকল্প।
উপকরণ, একটি কলা কুচি করে। একটি আপেল টুকরো করা। এক দুই কাপ আঙ্গুর। এক চামচ মধু।
এক চিমটি দারুন চিনি গুড়ো। পদ্ধতি, সব ফল একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন। স্বাদ
বাড়াতে কিছু বাদাম যোগ করা যেতে পারে।
কলার মিল্ক শেক। কলার মিল্ক শেক অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং তৃপ্তি দায়ক। উপকরণ, একটি
কলা। এক কাপ ঠান্ডা দুধ। এক চামচ চিনি বা মধ। ২-৩ টি বরফের টুকরা। পদ্ধতি,
সব উপকরণ ব্লেন্ডারে দিয়ে মিশিয়ে নিন ক্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন।
কলার রুটি বা পরোটা কলার পুর দিয়ে মিষ্টি পরোটা তৈরি করা যায় যা বাচ্চাদের খুব
পছন্দ। উপকরণ, একটি পাকা কলা। এক কাপ আটা। এক চামচ চিনি। এক চামচ ঘি। পদ্ধতি, কলা
চটকে আঠা চিনি ও ঘি মিশিয়ে তৈরি করুন। ছোট ছোট রুটি বানিয়ে তাওয়াই শেকে
নিন।
কলার কেক কলার কেক তৈরি করলে এটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হয়। উপকরণ, দুটি পাকা
কলা। এক কাপ ময়দা। ১-২ কাপ চিনি। ১-৪ কাপ তেল। এক চামচ বেকিং পাউডার। একটি ডিম।
পদ্ধতি, কলা চটকে সব উপকরণ মিশিয়ে ব্যাটার তৈরি করুন। ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি
সেলসিয়াসে ৩০ মিনিট বেক করুন।
কলার চিপস কাঁচা কলা দিয়ে মজাদার চিপস তৈরি করা যায়। উপকরণ, দুটি কাঁচা কলা।
এক দুই চা চামচ লবণ। এক চামচ গোল মরিচ। ভাজার জন্য তেল। পদ্ধতি, কলা পাতলা করে
কেটে নিন। গরম তেলে ভেজে লবণ ও গোলমরিচ ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।
কলা সম্পর্কে শেষ কথা
প্রতিদিন সকালে ১টি কলা খান ৯টি উপকারিতা জানুন কলা খাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে,
কাঁচা রান্না করা কিংবা অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে। এটি পুষ্টিতে ভরপুর এবং
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত কলা যোগ করুন এবং
সুস্থ থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url