অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা অর্জুন গাছ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ যা ভারতীয় উপমহাদেশের বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে অর্জুন গাছের ছাল ঔষধি গুনে ভরপুর একটি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে হয়। 

আয়ুর্বেদ ইউনানী ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অর্জুন গাছের ছাল হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সহ নানারকম শারীরিক সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। নিচে অর্জুন ছালের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

পেজসূচিপত্র: অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা .

ভূমিকা

আপনি যদি অর্জুন গাছের ছাল সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। অর্জুন গাছের ছাল একটি প্রাকৃতিক আশীর্বাদ হৃদরোগ থেকে শুরু করে ত্বক হাড় কিডনি ওজন নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নানা সমস্যার সমাধানে কার্যকারী। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অনুসারে এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। তবে যে কোন ভেষজ উপাদান নিয়ম মেনে ও সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা 

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় অর্জুন ছালকে প্রাকৃতিক কার্ডিওটনিক বলা হয়। এতে থাকা কো এনজাইম কিউ ১০ এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদপেশিকে শক্তি যোগায় এবং হৃদ স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি হৃদযন্ত্রের বেশি দৃঢ় করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে আয়ুর্বেদে অর্জুন ছালের হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রচুর ব্যবহৃত হয়। 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অর্জুন ছালের রস বা ক্বাত নিয়মিত সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্যানিন রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি মানসিক চাপও হ্রাস করে যা পরোক্ষ ভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে গবেষণায় দেখা গেছে অর্জুন ছাল শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এল ডি এল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডিএল বাড়াতে সক্ষম। এটি রক্তের চর্বি মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ধমনীতে চর্বি জমা হওয়া রোধ করে ফলে অ্যাথেরস্কোলেরোসিসের ঝুঁকি কমে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক অর্জুন ছাল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াই এবং রক্তের সুগারের মাত্রা হ্রাস করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। 

রক্ত পরিশোধনে সহায়ক অর্জুন ছাল রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে। 

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ ফ্রিলান্সিং সেক্টরে অবস্থান কত তম

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা পাচন তন্ত্রের উন্নতি ঘটায় অর্জুন ছাল হালকা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি হাওয়াই এটি অন্ত্রের সমস্যা ডায়রিয়া ডিসেন্ট্রি এবং আলস প্রতিরোধে সাহায্য করে এছাড়া এটি লিভার ফাংশন উন্নত করে এবং হজমে সহায়তা করে। 

মূত্রনালী ও কিডনির জন্য উপকারী অর্জুন ছাল ডাইইউরেটিক অর্থাৎ প্রস্রাব হিসেবে কাজ করে। এর ফলে কিডনির কাজ সহজ হয় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত জল ও লবণ অপসারণে সাহায্য করে। ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনেও এটি উপকারি। 

ত্বক ও চর্ম রোগে ব্যবহার অর্জন ছালে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিসেফটি গুণ যা ত্বকে লাগিয়ে বা পেস্ট হিসেবে ব্যবহার করলে ফোড়া একজিমা খসপচরা ইত্যাদি চর্ম রোগের উপকার মিলে। রক্তে থাকা অসুখ দিয়েও দূর করে যা চর্মরোগ নিরাময় সহায়ক। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা হাট ও দাঁতের স্বাস্থ্য সহায়ক অর্জুন ছালে থাকা ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে। এটি দাঁতের মজবুতির জন্য উপকারী। অর্জুন ছাল গুঁড়ো করে ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা রক্তপাত ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক অর্জুন ছাল হজম শক্তি বাড়ায় এবং মেটাবলিজম কে উদ্দীপিত করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ হয়। যারা ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত অর্জুন ছালের রস খেলে উপকার পেতে পারে। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা 

রক্তচাপ হ্রাসের সম্ভাবনা অর্জুন প্রাকৃতিক ভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করতে পারে। তবে যারা ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করছেন তাদের জন্য এটি অতিরিক্ত রক্তচাপ হ্রাসের কারণ হতে পারে। এতে করে মাথা ঘোরা দুর্বলতা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

রক্ত পাতলা করার ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া অনেক সময় এর হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে রোগীরা রক্ত পাতলা করার ঔষুধ খয়ে থাকেন যেমন অ্যাসপিরিন ওয়ারফারিন ইত্যাদি অর্জুন ছাল কিছুটা রক্ত পাতলা করার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ফলে এই ধরনের ওষুধের সঙ্গে একসাথে গ্রহন করে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এতে করে নাক দিয়ে রক্ত পড়া মাড়ি থেকে রক্ত আসা কিংবা ঘা ধরা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা হজমের সমস্যা অর্জুন ছাল অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি বমি ভাব ভূমি বা কোষ্টকাঠিন্যর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এটি খাদ্য হজমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বিশেষত যদি এটি খালি পেটে গ্রহণ করা হয়। 

লিভার এবং কিডনির উপর প্রভাব যদিও এখনো নির্দিষ্ট ভবে প্রমাণিত না হলেও দীর্ঘমেয়াদী ও মাত্রাতিরিক্ত অর্জুন ছাল গ্রহণ করলে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতার উপর নীতি বাচক প্রভাব পড়তে পারে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে লিভার ও কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আর যদি এই অঙ্গদয়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে তবে তা শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে। 

গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় বা শিশুকে স্তন্যদান কালীন সময় অর্জুন ছাল সেবন নিরাপদ কিনা এ নিয়ে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তাই এই অবস্থায় এটি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এটি গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে কিংবা দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে গিয়ে প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। 

আরো পড়ুন: ইতালি কৃষি ভিসা আবেদন ফরম 

ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করা অর্জুন ছাল কখনো কখনো কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের সঙ্গে সেবন করলে ব্লাড সুগার মাত্রাতিরিক্ত ভাবে কমে যেতে পারে। আবার কিছু এন্টিবায়োটিক বা এন্টি ইনফ্লামেটরি ওষুধের কার্যকারিতাও ব্যবহৃত হতে পারে। 

এলার্জির প্রতিক্রিয়া কিছু ব্যক্তি অর্জন ছালের প্রতি অ্যালার্জি হতে পারে এতে ত্বকের চুলকানি ফসকড়ি ফোলা ভাব শ্বাসকষ্ট বা অ্যানাফাইলাক্সিসের মতো গুরুত্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কারো এলার্জির ইতিহাস থাকলে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে এটি গ্রহণ করা উচিত। 

দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহারে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হওয়া অর্জুন ছাল দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন ব্যালেন্স ও রসায়নের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত যারা অন্যান্য ভেষজ ওষুধ একসাথে গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে। 

অর্জুন গাছের ছাল অবশ্যই একটি শক্তিশালী ভেষজ উপাদান যার বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। তবে যে কোন ভেষজ উপাদানের মত এর ব্যবহারে সচেতনতা থাকা জরুরী। অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অর্জুন ছাল গ্রহনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি আপনি আগে থেকেই কোন রোগে ভোগে থাকেন বা ওষুধ গ্রহণ করেন। প্রাকৃতিক হলেও প্রতিটি ভেষজ উপাদানে রয়েছে একটি নিরাপদ মাত্রা তাকে অতিক্রম করা কখনোই উচিত নয়। 

অর্জুন গাছের ছালের রস খাওয়ার নিয়ম 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা ছাল সংগ্রহ সাধারণত গ্রীষ্মকালে অর্জুন গাছের প্রাপ্তবয়স্ক গাছ থেকে ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা ও পাতলা ছাল সংগ্রহ করা হয়।। খেয়াল রাখতে হবে গাছের খুব বেশি ছল যেন না কাটা হয় যাতে গাছের ক্ষতি না হয়। 

পরিষ্কার করা সংগ্রহ করা ছাল ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে মাটি ধুলাবালি ও অন্যান্য আবর্জনা না থাকে। 

শুকনো ছাল গুলো ছায়াযুক্ত জায়গায় শুকিয়ে নিতে হবে রোদে শুকালে ওষুধ নষ্ট হতে পারে। 

রস তৈরির পদ্ধতি ১

শুকনো ছাল ৫-৭ গ্রাম প্রায় ১ চামচ গুড়া করা ছাল। 

এক কাপ ২০০ মিলি জল নিয়ে ছাল দিয়ে অর্ধেক পরিমাণ জল না হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করতে হবে। 

এরপর জল ছেঁকে নিয়ে ক্বাথ তৈরি হয়। 

পান করার নিয়ম প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অথবা রাতে খাবারের ৩০ মিনিট পর গরম গরম পান করতে পারেন। 

আরো পড়ুন: একাউন্টিং ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো

দিনে এক দুইবার খাওয়া যায় তবে একটানা না খেয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়া ভালো। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা পদ্ধতি ২ 

  • এক চামচ অর্জুন ছালের গুঁড়ো প্লাস এক গ্লাস দুধ ও এক গ্লাস পানি। 
  • সবকিছুই একসাথে ফুটিয়ে পানি শুকিয়ে গেলে দুধ ঘন হয়ে এলে ছেঁকে খেতে হয়। 
  • পান করার নিয়ম প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা রতে ঘুমানোর আগে খাওয়া ভালো। 
  • এটি হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপ অনিদ্রা ও দুর্বলতার জন্য উপকারী। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা সতর্কতা 

  • গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়। 
  • উচ্চ রক্তচাপ হার্টের রোগ বা অন্য ওষুধ গ্রহণ করছেন এমন ব্যক্তিদের ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। 

 অর্জুন গাছের ছাল সম্পর্কে শেষ কথা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা বা রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। অর্জুন ছালের রস একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ওষুধ হলেও এটি কখন কিভাবে এবং কতটুকু খাওয়া উচিত সেই বিষয়ে জ্ঞান রাখা জরুরি। সঠিক নিয়মে নিয়মিত গ্রহণ করলে এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url