বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ কোরবানির ঈদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এটি ঈদুল আযহা নামে পরিচিত। হিজরির বর্ষপঞ্জির জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এই ঈদ পালিত হয়। মুসলমানরা এই দিনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পশু কুরবানী দিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে এই দিনটি অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। কোরবানির ঈদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আটিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পেজসূচিপত্র: বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ .

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ

কোরবানির ইতিহাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মহানবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হন। আল্লাহর প্রতি তার নিঃশর্ত আনুগত্যের পরীক্ষা হিসেবে এই ঘটনা মুসলিম উম্মার কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পরে ইসমাইল আল্লাহ ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানির আদেশ দেন। এই ত্যাগ আত্মসমর্পণের চেতনা থেকেই কোরবানির ঈদের উৎপত্তি। 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ ঘিরে শুরু হয় নানা প্রস্তুতি। ঈদের আগেই হাটে-হাটে বসে কোরবানির পশুর বাজার। শহর ও গ্রামে তৈরি হয় অস্থায়ী প্রচুর হাট। গরু ছাগল ভেড়া উট ইত্যাদি পশু ক্রয় বিক্রয় হয়। অনেকে নিজেই হাটে গিয়ে পশু কিনে আনেন আবার কেউ অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনেন। এ এক আলাদা উৎসবের রূপ নেই। 

ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর আল্লাহর নামে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে পশু কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানির মাংস তিন ভাগ ভাগ করা হয়। এক অংশ নিজেরা খাওয়া হয়, এক অংশ আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া হয়, এবং এক অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এভাবে সমাজে সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। 

আরো পড়ুন: সপ্নে সাপ দেখলে কি হয়

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ কোরবানির ঈদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয় এটি আত্মত্যাগ সহমর্মিতা এবং সাম্যের মহান শিক্ষা দেয়। ধনী গরিব সবাই মিলেমিশে এই উৎসব পালন করে। বিশেষ করে গরীব মানুষরা এই সময়ে মাংস খাওয়ার সুযোগ পান। যা অনেকের কাছে সারা বছরেও সম্ভব হয় না। 

বাংলাদেশে এই সময়টি গ্রামীণ এবং শহরে সংস্কৃতির একটি চমৎকার মেলবন্ধন তৈরি করে। বিভিন্ন রান্না যেমন গরুর রেজালা কাবাব ভুনা খিচুড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয় ঈদের খাবারের টেবিল। আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে একত্রে খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়া এই উৎসবের অন্যতম আনন্দময় দিক। 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ সব মিলিয়ে কুরবানীর ঈদ বাংলাদেশের মুসলমানদের জীবন আনন্দ ধর্মীয় আবেগ আত্মত্যাগ এবং সহানুভূতির এক অনুপম মিলনক্ষেত্র।। এই উৎসবটি প্রতিটি মানুষের মধ্যে মানবতা ও ঈমানদারীর চর্চা আরো গভীর করে তোলে।

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ ঈদুল আযহা নামে পরিচিত ২০২৫ সালে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার এর উপর ভিত্তি করে ঈদুল আযহা ১০ জিলহজ তারিখে পালিত হয়। যা চাঁদের অবস্থান এর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত ঈদের সঠিক তারিখ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার পর নিশ্চিত করা হয়। 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ সরকারি সূত্র অনুযায়ী ২০২৫ সালে ঈদুল আযহার ছুটির ৫ই জুন থেকে ১০ এ জুন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কিছু সূত্রের ৬ জুন শুক্রবার ঈদুল আযহা উদযাপনের কথা বলা হয়েছে। আবার কিছু সূত্রের ৭ জুন শনিবার উল্লেখ রয়েছে।

ঈদুল আযহার তারিখ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে হওয়ায় সঠিক তারিখ পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। তাই চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের তারিখ পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত ঈদের ছুটির সময় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এবং মানুষজন তাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাই।

ঈদুল আযহার মূল তাৎপর্য হলো ত্যাগ ও আত্মসমর্পণ। এই দিনে মুসলমানরা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ত্যাগের স্মরণে পশু কোরবানি করে থাকেন। ঈদুল আযহার সময় বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ নতুন পোশাক পরে ঈদের নামাজ আদায় করে এবং পরস্পরের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। এছাড়াও ঈদের সময় বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় যেমন সেমাই পায়েস বিরিয়ানি ইত্যাদি। 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ সংক্ষেপে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারিত হয়েছে। তবে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে সঠিক তারিখ নির্ভর করবে। ঈদুল আযহা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।

কেমন পশু কোরবানি দিবেন 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রচুর কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে এই কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তা শরীয়তের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত রয়েছে। তাই কোরবানি করার আগে জানা জরুরি কেমন পশু কোরবানি দেওয়া উচিত। 

প্রথমত কোরবানির পশু হতে হবে হালাল। গরু মহিষ ছাগল ভেড়া দুম্বা ও ইত্যাদি হালাল পশু কোরবানি হিসেবে গ্রহণযোগ্য। শুকুর কুকুর বা অন্য কোন হারাম পশু কোরবানির উপযোগী নয়।

আরো পড়ুন: মিয়া খলিফার জীবনের ইতিহাস সম্পর্কে 

দ্বিতীয়ত পশুর বয়স নির্ধারিত হতে হবে। সাধারণত ছাগল ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে বা নিম্ন দুই দাঁতা হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সে ভেরা বা দুম্বা এমন হয় যা দেখতে এক বছরের মত পরিপূর্ণ হয় তাহলে সেটিও কুরবানী করা যায়, যদি এক বছর বা দুই দাঁত হয়েছে এরকম পশু পাওয়া না যায়। গরু বা মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু বা মহিষের বয়স দাঁতের উপর নির্ভর করে যে পশুগুলি দুটি দাঁত হয়েছে সেগুলো কুরবানীর উপযোগী। 

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ তৃতীয়টি পশুটি অবশ্যই সুস্থ ও নীরোগ হতে হবে। এমন পশু কোরবানি দেওয়া যাবে না যেগুলো হলো

  • এক বা দুই চোখ অন্ধ। 
  • খুব দুর্বল বা হাড্ডিসার। 
  • পা ভাঙ্গা বা দাঁড়াতে অক্ষম প্রতিবন্ধী। 
  • কানকাটা বা লেজ কাটা। 
  • দাঁত অধিকাংশ পড়ে গেছে। 

এসব ত্রুটি যদি থাকে তাহলে সেই পশু কোরবানির অযোগ্য হবে। কারণ কোরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাই কোরবানির পশুতে যেন কোন ধরনের অপূর্ণতা না থাকে। সুস্থ রোগমুক্ত পশু কোরবানি করতে হবে। 

চতুর্থত কোরবানির পশু হতে হবে মালিকানাধীন এবং হালাল উপার্জনে কেনা। চুরি করা বা অন্যের হক দিয়ে কেনা পশু কুরবানী করা যাবে না। এর সাথে জড়িত থাকবে গোনাহ।

কোরবানির পশু নির্বাচনে সদিচ্ছা এবং নিয়তের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। কেউ যেন শুধুমাত্র লোক দেখানো বা সামাজিক মর্যাদার জন্য পশু কুরবানী না দেয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন  আল্লাহ তাকওয়া ও নিয়তের উপর কোরবানি কবুল করেন ।

কোরবানি সম্পর্কে শেষ কথা

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ কত তারিখ ২০২৫ পরিশেষে বলা যায় কোরবানির পশু নির্বাচনে যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরী। ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে সুস্থ নির্ধারিত বয়সের ত্রুটিমুক্ত ও হালাল উপায়ে অর্জিত পশু কোরবানি করলে তবে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার আশা করা যায়। 

কোরবানি শুধুমাত্র একটি পশু জবাই নয় বরং তা আত্মত্যাগ ত্যাগের মহিমা এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের একটি মাধ্যম। তাই এই এবাদতের যেন কোন ত্রুটি না থাকে সে বিষয়ে সকলের সচেতন থাকা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url